এবার সাবধান হওয়ার পালা
প্রেমের ফাঁদ পেতে পর্নোগ্রাফি ধারণ করে ইন্টারনেটে ছাড়ছে দুর্বৃত্তরা। ছড়িয়ে পড়ছে মোবাইল থেকে মোবাইলে। এমনকি কারো গোপন দৃশ্য চলে যাচ্ছে পর্ণো-ভিডিও ব্যবসায়ীদের হাতে। নারীরা শিকার হচ্ছে সন্ত্রাস, অপরাধ ও ব্ল্যাকমেইলিংয়ের। হাল সময়ে দেশে আশঙ্কাজনক হারে বেড়েছে এ ধরনের
অপরাধ। পর্নোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণে কঠোর আইন প্রণয়ন করছে সরকার। এটা কতটা কার্যকর হবে? লিখেছেন
জিনাত রিপা ও আরাফাত শাহরিয়ার
ঘটনা ১
স্কুলের গেটের সামনে থেকে নবম শ্রেণীর এক ছাত্রীকে তুলে নিয়ে যায় পাঁচ-ছয়জন যুবক। নিয়ে যাওয়া হয় মহাখালীর একটি আবাসিক হোটেলে। গণধর্ষণ করে সে দৃশ্য ধারণ করে ক্যামেরায়। রাত ১২টায় মেয়েটিকে ছেড়ে দিয়ে বলা হয়, এ কথা কাউকে বললে ভিডিও বাজারে ছেড়ে দেওয়া হবে। মেয়েটি কথা রাখলেও নরপশুরা ওই ভিডিও ছেড়ে দেয় ইন্টারনেটে। তা ছড়িয়ে পড়ে মোবাইল ফোনেও। এ ঘটনার প্রায় ছয় মাস পর গেল বছরের এপ্রিলে অভিযুক্তদের একজন আতিকুল ইসলাম ইমনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
ঘটনা ২
মেয়েটিকে দীর্ঘদিন ধরে প্রেমের প্রস্তাব দিয়ে আসছিল অভি মিয়া। একপর্যায়ে বাধ্য হয়ে মেয়েটি এ প্রস্তাবে মিথ্যা সায় দেয়। একদিন সুযোগ বুঝে মেয়েটিকে একটি নিরাপদ স্থানে নিয়ে যায় অভি। জোর করে আপত্তিকর কিছু ছবি তোলে। পরে বিয়ের কথা বলে মেয়েটির অনিচ্ছা সত্ত্বেও যৌন সম্পর্ক স্থাপন করে। এই দৃশ্য ক্যামেরাবন্দি করে অভির এক সহযোগী। মেয়েটি বিয়ের কথা বললে বেঁকে বসে অভি। উল্টো আপত্তিকর ছবি ও ভিডিওচিত্র ইন্টারনেটে ছেড়ে দেওয়ার হুমকি দেয়। পরে তা করেও। ২০১১ সালের জুলাই মাসে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইলে ঘটে স্কুলছাত্রী ধর্ষণ এবং ইন্টারনেটে ছবি ও ভিডিওচিত্র ছাড়ার এ ঘটনা।
ঘটনা ৩
তাজুলের সঙ্গে মেয়েটির পরিচয় স্কুলে যাওয়া-আসার পথে। একসময় দুজনের মধ্যে গড়ে ওঠে প্রেমের সম্পর্ক। গত ২৫ মার্চ সকালে বিয়ে করার কথা বলে প্রাইভেট কারে করে মেয়েটিকে অজ্ঞাত একটি বাড়িতে নিয়ে যায় তাজুল। কোমল পানীয়ের সঙ্গে উত্তেজক পদার্থ খাইয়ে মেয়েটিকে ধর্ষণ করে। এ বিষয়ে কাউকে কিছু না বলার জন্য ভয়ভীতি দেখিয়ে প্রাইভেট কার থেকে মেয়েটিকে মাঝপথে নামিয়ে দেয় তাজুল। মাদ্রাসার উচ্চ মাধ্যমিকের ছাত্র তাজুল এ ঘটনার দুই মাস পর মোবাইলে ধারণ করা ধর্ষণের ভিডিওচিত্র ছড়িয়ে দেয় বিভিন্ন মোবাইলে। ঘটনাটি সাতক্ষীরার পাটকেলঘাটার।
নতুন আইন, নতুন স্বপ্ন
দেশে প্রতিনিয়ত মেয়েরা শিকার হচ্ছে এ ভয়াল ব্যাধির। প্রায়ই এমনটি ঘটলেও অনেক ঘটনাই থেকে যাচ্ছে লোকচক্ষুর অন্তরালে। বখাটেরা ভিডিও বা স্থিরচিত্রের ভয় দেখিয়ে ভোগ্যপণ্য হিসেবে ব্যবহার করছে ঘটনার শিকার নারীদের। লজ্জা ও ভয়ে মুখ খুলতে পারে না মেয়েরা। এত দিন যে আইন ছিল, তা একেবারেই দুর্বল, যার ফাঁক গলে খুব সহজেই বেরিয়ে যাওয়ার সুযোগ ছিল অপরাধীদের। তাই অহরহ এ অপরাধ ঘটলেও ছিল না এ আইনের চল।
সম্প্রতি এ সামাজিক অপরাধ বন্ধে সব ধরনের পর্নোগ্রাফি উৎপাদন এবং সরবরাহ নিষিদ্ধ করে সরকার প্রণয়ন করেছে একটি নতুন আইন। ইতিমধ্যে খসড়া আইনের চূড়ান্ত অনুমোদনও করেছে মন্ত্রিসভা। ২ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠকে এ অনুমোদন দেওয়া হয়। আইন অমান্য করলে সবর্োচ্চ ১০ বছর কারাদণ্ড ও পাঁচ লাখ টাকা জরিমানা অথবা উভয় দণ্ডের বিধান
রাখা হয়েছে।
আইনজ্ঞ বলেন :
বাংলাদেশ জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতির নির্বাহী পরিচালক অ্যাডভোকেট সালমা আলী বলেন, পর্নোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণে ২০০৬ সালের যে আইনটা ছিল, সেটার ব্যবহার ছিল না। প্রথম কেস আমরাই করেছি, সেটাও আবার কয়েক মাস আগে। চেক করতে গিয়ে দেখেছি, আইনটা খুবই দুর্বল। উপলব্ধি করেছি, এটার পরিবর্তন দরকার। আমরা বলেছি, একটি সুনির্দিষ্ট আইন চাই এবং আমাদের কাছে অনেক কেস আসছে। লজ্জায়, লোকভয়ে অনেকে অভিযোগ করছে পারছে না, শক্তিশালী ও সুনির্দিষ্ট আইন না থাকায় আমরা সেভাবে সাপোর্টও দিতে পারছি না। অনেক অল্পবয়সী মেয়েও ব্লাকমেইলিংয়ের শিকার হচ্ছে। একটা মেয়ে হয়তো দেশের বাইরে থাকে, সেও রেহাই পাচ্ছে না। আমি একজন প্রিটিশনার, অনেক বছর ধরেই এ বিষয়টি নিয়ে কাজ করছি। অনেক কেস করেছি। এর আগে মানবপাচার আইন, অ্যান্টিভায়োলেন্ট 'ল, অন্যান্য আইন প্রণয়নের সময় আমরা সরাসরি সরকারের সঙ্গে যুক্ত ছিলাম। ড্রাফট করে দিয়েছি, নিজেরা কোর-কমিটিতে ছিলাম। কিন্তু দুঃখের বিষয়, এ আইনটা নিয়ে সরকার আমাদের সঙ্গে কোনো আলোচনা করেনি। এর আগে এ বিষয়ে চেষ্টা করেও আমরা পারিনি। পাস হওয়ার পর আমরা কিন্তু খসড়া আইনও পাইনি। এখন এটি পার্লামেন্টে যাবে। আমাদের কাছে অবাক লাগছে, সরকার কেন আমাদের অ্যাকসেস দেয়নি। ওয়েবসাইটে নেই, হোম মিনিস্ট্রি, ইনফরমেশন মিনিস্ট্রি ও অন্যান্য মিনিস্টিতে চেয়েও আমরা এটি পাইনি। এটা কিন্তু আমাদের কাছে খুবই সন্দেহজনক। এর মধ্যে হয়তো এমন কোনো বিষয় আছে, যা বাস্তবায়ন করতে সমস্যা হবে অথবা এর অপব্যবহারও হতে পারে। আলোচনা সাপেক্ষে যদি হতো, আইনের দুর্বল বিষয়গুলোও উঠে আসত। আইনে যে শাস্তির বিধান রাখা হয়েছে, তা নিয়ে আমাদের কোনো মাথাব্যথা নেই। আমি মনে করি, এটা যথেষ্ট। বাস্তবায়ন করাই; কিন্তু প্রতিটা আইনের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। আইন প্রয়োগের জন্য পুলিশ ও অন্যান্য স্টেক হোল্ডারদের নিয়ে যে ভূমিকাটা আছে, তা কার্যকর হবে কি না দেখার বিষয়। ভিকটিমের নিরাপত্তা ও গোপনীয়তার বিষয়গুলো দেখতে হবে। নিশ্চিত করতে হবে জবাবদিহিতার বিষয়টিও।
আইনের প্রয়োগ হবে তো?
বিশেষ আদালত বা ট্রাইব্যুনালের মাধ্যমে বিচারের বিধান রাখা হয়েছে খসড়া আইনে। আইনের অধীনে পুলিশের একজন সাব-ইন্সপেক্টর বা সমমানের কর্মকর্তা পর্নোগ্রাফি ধরতে বিভিন্ন জায়গায় তল্লাশি করবেন। তাঁরা অভিযুক্তদের সঙ্গে সঙ্গে আদালতে সোপর্দ করবেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মাহবুবা নাসরিন মনে করেন, আলোচিত কোনো ঘটনার বিচার করে আইনটির দ্রুত প্রয়োগ করতে হবে, অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে। তিনি বলেন, 'অতীতে যেসব ঘটনা ঘটে গেছে, তা এ আইনের আওতায় এনে বিচার করতে হবে। এতে সবাই শাস্তির কথাটি জেনে যাবে। আর এ ক্ষেত্রে ভুক্তভোগী, পরিবার, সমাজ, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে সাহসী ভূমিকা নিতে হবে। না হলে এটি আইন হিসেবেই
থেকে যাবে।'
আইনয়োগকারী সংস্থার ভূমিকা যথাযথ না হলে এ দোষীরা ধরা পড়বে না, ভিকটিম পরিবার পড়বে উল্টো হুমকির মুখে। তাই সবার আগে ভিকটিমের নিরাপত্তা ও গোপনীয়তা নিশ্চিত করতে হবে। এমনটিই মনে করেন একটি বেসরকারি সংস্থার উন্নয়নকর্মী জিহাদ বিন শামস।
কে কী বলেন
একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র রাতিন হাসান মনে করেন, এ বিষয়ে গণমাধ্যমেরও ভূমিকা আছে। তিনি বলেন, 'টেলিভিশন ও অন্যান্য জাতীয় প্রচারমাধ্যমে নতুন প্রণীত আইন ও শাস্তির বিষয়ে ব্যাপক প্রচারণা চালাতে হবে। এ বিষয়ে জনমত গড়ে তুলতে হবে।'
কেউ যেন আইনের অপব্যবহারের সুযোগ না পায়, মাথায় রাখতে হবে সে বিষয়টিও। প্রধানমন্ত্রীর প্রেসসচিব আবুল কালাম
স্কুলের গেটের সামনে থেকে নবম শ্রেণীর এক ছাত্রীকে তুলে নিয়ে যায় পাঁচ-ছয়জন যুবক। নিয়ে যাওয়া হয় মহাখালীর একটি আবাসিক হোটেলে। গণধর্ষণ করে সে দৃশ্য ধারণ করে ক্যামেরায়। রাত ১২টায় মেয়েটিকে ছেড়ে দিয়ে বলা হয়, এ কথা কাউকে বললে ভিডিও বাজারে ছেড়ে দেওয়া হবে। মেয়েটি কথা রাখলেও নরপশুরা ওই ভিডিও ছেড়ে দেয় ইন্টারনেটে। তা ছড়িয়ে পড়ে মোবাইল ফোনেও। এ ঘটনার প্রায় ছয় মাস পর গেল বছরের এপ্রিলে অভিযুক্তদের একজন আতিকুল ইসলাম ইমনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
ঘটনা ২
মেয়েটিকে দীর্ঘদিন ধরে প্রেমের প্রস্তাব দিয়ে আসছিল অভি মিয়া। একপর্যায়ে বাধ্য হয়ে মেয়েটি এ প্রস্তাবে মিথ্যা সায় দেয়। একদিন সুযোগ বুঝে মেয়েটিকে একটি নিরাপদ স্থানে নিয়ে যায় অভি। জোর করে আপত্তিকর কিছু ছবি তোলে। পরে বিয়ের কথা বলে মেয়েটির অনিচ্ছা সত্ত্বেও যৌন সম্পর্ক স্থাপন করে। এই দৃশ্য ক্যামেরাবন্দি করে অভির এক সহযোগী। মেয়েটি বিয়ের কথা বললে বেঁকে বসে অভি। উল্টো আপত্তিকর ছবি ও ভিডিওচিত্র ইন্টারনেটে ছেড়ে দেওয়ার হুমকি দেয়। পরে তা করেও। ২০১১ সালের জুলাই মাসে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইলে ঘটে স্কুলছাত্রী ধর্ষণ এবং ইন্টারনেটে ছবি ও ভিডিওচিত্র ছাড়ার এ ঘটনা।
ঘটনা ৩
তাজুলের সঙ্গে মেয়েটির পরিচয় স্কুলে যাওয়া-আসার পথে। একসময় দুজনের মধ্যে গড়ে ওঠে প্রেমের সম্পর্ক। গত ২৫ মার্চ সকালে বিয়ে করার কথা বলে প্রাইভেট কারে করে মেয়েটিকে অজ্ঞাত একটি বাড়িতে নিয়ে যায় তাজুল। কোমল পানীয়ের সঙ্গে উত্তেজক পদার্থ খাইয়ে মেয়েটিকে ধর্ষণ করে। এ বিষয়ে কাউকে কিছু না বলার জন্য ভয়ভীতি দেখিয়ে প্রাইভেট কার থেকে মেয়েটিকে মাঝপথে নামিয়ে দেয় তাজুল। মাদ্রাসার উচ্চ মাধ্যমিকের ছাত্র তাজুল এ ঘটনার দুই মাস পর মোবাইলে ধারণ করা ধর্ষণের ভিডিওচিত্র ছড়িয়ে দেয় বিভিন্ন মোবাইলে। ঘটনাটি সাতক্ষীরার পাটকেলঘাটার।
নতুন আইন, নতুন স্বপ্ন
দেশে প্রতিনিয়ত মেয়েরা শিকার হচ্ছে এ ভয়াল ব্যাধির। প্রায়ই এমনটি ঘটলেও অনেক ঘটনাই থেকে যাচ্ছে লোকচক্ষুর অন্তরালে। বখাটেরা ভিডিও বা স্থিরচিত্রের ভয় দেখিয়ে ভোগ্যপণ্য হিসেবে ব্যবহার করছে ঘটনার শিকার নারীদের। লজ্জা ও ভয়ে মুখ খুলতে পারে না মেয়েরা। এত দিন যে আইন ছিল, তা একেবারেই দুর্বল, যার ফাঁক গলে খুব সহজেই বেরিয়ে যাওয়ার সুযোগ ছিল অপরাধীদের। তাই অহরহ এ অপরাধ ঘটলেও ছিল না এ আইনের চল।
সম্প্রতি এ সামাজিক অপরাধ বন্ধে সব ধরনের পর্নোগ্রাফি উৎপাদন এবং সরবরাহ নিষিদ্ধ করে সরকার প্রণয়ন করেছে একটি নতুন আইন। ইতিমধ্যে খসড়া আইনের চূড়ান্ত অনুমোদনও করেছে মন্ত্রিসভা। ২ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠকে এ অনুমোদন দেওয়া হয়। আইন অমান্য করলে সবর্োচ্চ ১০ বছর কারাদণ্ড ও পাঁচ লাখ টাকা জরিমানা অথবা উভয় দণ্ডের বিধান
রাখা হয়েছে।
আইনজ্ঞ বলেন :
বাংলাদেশ জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতির নির্বাহী পরিচালক অ্যাডভোকেট সালমা আলী বলেন, পর্নোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণে ২০০৬ সালের যে আইনটা ছিল, সেটার ব্যবহার ছিল না। প্রথম কেস আমরাই করেছি, সেটাও আবার কয়েক মাস আগে। চেক করতে গিয়ে দেখেছি, আইনটা খুবই দুর্বল। উপলব্ধি করেছি, এটার পরিবর্তন দরকার। আমরা বলেছি, একটি সুনির্দিষ্ট আইন চাই এবং আমাদের কাছে অনেক কেস আসছে। লজ্জায়, লোকভয়ে অনেকে অভিযোগ করছে পারছে না, শক্তিশালী ও সুনির্দিষ্ট আইন না থাকায় আমরা সেভাবে সাপোর্টও দিতে পারছি না। অনেক অল্পবয়সী মেয়েও ব্লাকমেইলিংয়ের শিকার হচ্ছে। একটা মেয়ে হয়তো দেশের বাইরে থাকে, সেও রেহাই পাচ্ছে না। আমি একজন প্রিটিশনার, অনেক বছর ধরেই এ বিষয়টি নিয়ে কাজ করছি। অনেক কেস করেছি। এর আগে মানবপাচার আইন, অ্যান্টিভায়োলেন্ট 'ল, অন্যান্য আইন প্রণয়নের সময় আমরা সরাসরি সরকারের সঙ্গে যুক্ত ছিলাম। ড্রাফট করে দিয়েছি, নিজেরা কোর-কমিটিতে ছিলাম। কিন্তু দুঃখের বিষয়, এ আইনটা নিয়ে সরকার আমাদের সঙ্গে কোনো আলোচনা করেনি। এর আগে এ বিষয়ে চেষ্টা করেও আমরা পারিনি। পাস হওয়ার পর আমরা কিন্তু খসড়া আইনও পাইনি। এখন এটি পার্লামেন্টে যাবে। আমাদের কাছে অবাক লাগছে, সরকার কেন আমাদের অ্যাকসেস দেয়নি। ওয়েবসাইটে নেই, হোম মিনিস্ট্রি, ইনফরমেশন মিনিস্ট্রি ও অন্যান্য মিনিস্টিতে চেয়েও আমরা এটি পাইনি। এটা কিন্তু আমাদের কাছে খুবই সন্দেহজনক। এর মধ্যে হয়তো এমন কোনো বিষয় আছে, যা বাস্তবায়ন করতে সমস্যা হবে অথবা এর অপব্যবহারও হতে পারে। আলোচনা সাপেক্ষে যদি হতো, আইনের দুর্বল বিষয়গুলোও উঠে আসত। আইনে যে শাস্তির বিধান রাখা হয়েছে, তা নিয়ে আমাদের কোনো মাথাব্যথা নেই। আমি মনে করি, এটা যথেষ্ট। বাস্তবায়ন করাই; কিন্তু প্রতিটা আইনের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। আইন প্রয়োগের জন্য পুলিশ ও অন্যান্য স্টেক হোল্ডারদের নিয়ে যে ভূমিকাটা আছে, তা কার্যকর হবে কি না দেখার বিষয়। ভিকটিমের নিরাপত্তা ও গোপনীয়তার বিষয়গুলো দেখতে হবে। নিশ্চিত করতে হবে জবাবদিহিতার বিষয়টিও।
আইনের প্রয়োগ হবে তো?
বিশেষ আদালত বা ট্রাইব্যুনালের মাধ্যমে বিচারের বিধান রাখা হয়েছে খসড়া আইনে। আইনের অধীনে পুলিশের একজন সাব-ইন্সপেক্টর বা সমমানের কর্মকর্তা পর্নোগ্রাফি ধরতে বিভিন্ন জায়গায় তল্লাশি করবেন। তাঁরা অভিযুক্তদের সঙ্গে সঙ্গে আদালতে সোপর্দ করবেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মাহবুবা নাসরিন মনে করেন, আলোচিত কোনো ঘটনার বিচার করে আইনটির দ্রুত প্রয়োগ করতে হবে, অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে। তিনি বলেন, 'অতীতে যেসব ঘটনা ঘটে গেছে, তা এ আইনের আওতায় এনে বিচার করতে হবে। এতে সবাই শাস্তির কথাটি জেনে যাবে। আর এ ক্ষেত্রে ভুক্তভোগী, পরিবার, সমাজ, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে সাহসী ভূমিকা নিতে হবে। না হলে এটি আইন হিসেবেই
থেকে যাবে।'
আইনয়োগকারী সংস্থার ভূমিকা যথাযথ না হলে এ দোষীরা ধরা পড়বে না, ভিকটিম পরিবার পড়বে উল্টো হুমকির মুখে। তাই সবার আগে ভিকটিমের নিরাপত্তা ও গোপনীয়তা নিশ্চিত করতে হবে। এমনটিই মনে করেন একটি বেসরকারি সংস্থার উন্নয়নকর্মী জিহাদ বিন শামস।
কে কী বলেন
একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র রাতিন হাসান মনে করেন, এ বিষয়ে গণমাধ্যমেরও ভূমিকা আছে। তিনি বলেন, 'টেলিভিশন ও অন্যান্য জাতীয় প্রচারমাধ্যমে নতুন প্রণীত আইন ও শাস্তির বিষয়ে ব্যাপক প্রচারণা চালাতে হবে। এ বিষয়ে জনমত গড়ে তুলতে হবে।'
কেউ যেন আইনের অপব্যবহারের সুযোগ না পায়, মাথায় রাখতে হবে সে বিষয়টিও। প্রধানমন্ত্রীর প্রেসসচিব আবুল কালাম
সূত্র : দৈনিক কালের কণ্ঠ, জয়িতা । তারিখ : ২৪-০১-২০১২ইং