মানুষের বুদ্ধিমত্তা
বা আইকিউ অবশ্যই উঁচুমানের বৈশিষ্ট্য। সাধারণভাবে
যা অপরিবর্তিত থাকে বলেই মনে করা
হয়। বুদ্ধিমত্তা
এরকম হতেও দেখা যায় না। কেউ একটু বেশি বুদ্ধিদীপ্ত আবার কেউ কিছুটা পিছিয়ে, সাধারণ অভিজ্ঞতা তাই বলে। শরীরের পরিবর্তন নানাভাবে হতে পারে; কিন্তু মস্তিষ্ক যেভাবে বিকশিত হয় সারাজীবন সেই ধাঁচ বজায় থাকে। এ
ধারণা বহুদিন ধরেই জানা। জানা গেছে, শরীরের গঠনের
পাশাপাশি মানসিক গঠনও পাল্টে দেওয়া যায়। এমনকি
বৃদ্ধ বয়সেও এটা সম্ভব। কিন্তু
তার জন্য প্রয়োজন নির্দিষ্ট ধরনের বিজ্ঞানসম্মত ট্রেনিং। আইকিউ পর্যন্ত বাড়িয়ে দেবে। প্রায়
এক শতক ধরে বিজ্ঞানীরা মনে করেছেন আইকিউ বংশগত
বৈশিষ্ট্যের ওপর অনেকটা নির্ভর করে। কোনো
ধরনের পড়াশোনা বা মনোযোগ ইত্যাদি
বাড়িয়ে এই বংশগত বা জিনগত প্রভাব পাল্টে ফেলা যাবে না বলে মনে করা হয়। কিন্তু
এখন এ বংশগত বৈশিষ্ট্যও বদলে ফেলা সম্ভব। ইউনিভার্সিটি
অব মিসিগানের বিজ্ঞানী সুসান জেগি
আর তার সঙ্গীরা তিন বছর আগে বুদ্ধিমত্তার রহস্য
ভেদ করার চেষ্টা করেন। সুসান আর অপর বিজ্ঞানী মার্টিন
বাস্ককোহেল ইউনিভার্সিটি অব বার্ন
(সুইজারল্যান্ড) থেকে তাদের ডক্টরেট ডিগ্রি নিয়েছেন। তারা এই দুই ইউনিভার্সিটিতেই তাদের কাজ চালিয়ে গেছেন
এবং এমন কিছু 'মেন্টাল এক্সারসাইজ' বা মানসিক ব্যায়াম ঠিক করছেন, যা আইকিউ বা বুদ্ধিমত্তা
বাড়াবে। প্রয়োগের পর দেখা গেছে আইকিউ বা
বুদ্ধিমত্তা আগের চেয়ে বেড়েছে। যেন
শারীরিক কসরত করার মতোই মস্তিষ্ক ব্যায়ামে বুদ্ধি বেড়ে উঠতে থাকে। সুসান
বলেছেন, এটা শারীরিক ব্যায়ামের মতোই। নির্দিষ্ট
কিছু গেম বা খেলায় দক্ষতা বাড়তে দেখা গেছে
অথচ বংশগত আইকিউ বা জন্মগত আইকিউ ধারণা প্রায় চার দশকের পুরনো। ১৯৬০
সালে বিতর্কিত আর্থার জেনসন বলেছিলেন, জেনারেল ইন্টেলিজেন্স ফ্যাক্টর বা জি-এর কথা যা বংশগত
বৈশিষ্ট্যের ওপর নির্ভর করে। কিন্তু আইকিউ আর জাতিগোষ্ঠী নিয়ে ধারণা কেউ মেনে
নেয়নি। এর যথেষ্ট সমালোচনা হয়। এখন
জেনসন ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়ার আছে (বার্কলে)। কিন্তু জিনগত বুদ্ধিমত্তার ধারণা স্থায়ীভাবে তৈরি হয়ে গেল। ১৯৭০
সালে হার্ভার্ডের মনস্তত্ত্ববিদ রেমন্ড ক্যাটেল
বলেছিলেন, দু'ধরনের আইকিউর কথা ক্রিস্টালাইন এবং প্লাস্টিক। প্রথম
ধরনের বুদ্ধিমত্তার প্রকাশ ঘটে যখন জানা তথ্য বা পুরনো অভিজ্ঞতা ব্যবহার করা হয় (ক্রিস্টালাইন) ফ্লুইড
ইন্টেলিজেন্স হলো নতুন সমস্যার সমাধানে বুদ্ধির
প্রয়োগ। ক্রিস্টালাইন ইন্টেলিজেন্স, স্মৃতিশক্তি আর অর্জিত জ্ঞানের প্রয়োগ। কিন্তু
ফ্লুইড ইন্টেলিজেন্স এসবের ওপর
নির্ভর করে না। দুটি আলাদা ধরনের স্নায়বিক
প্রক্রিয়া বলে জানা ছিল। ক্রিস্টালাইন
ইন্টেলিজেন্স এভাবে বদলায় না। ক্রিস্টালাইন
বলতে কোনো কিছু যা জানা পথ ধরে চলে আর ফ্লুইড বলতে
পরিস্থিতি অনুযায়ী বদলায় এমন কিছু বোঝায়। ফ্লুইড ইন্টেলিজেন্স ট্রেনিং করিয়ে বাড়িয়ে নেওয়ার
চেষ্টা চালানো হচ্ছে। বিভিন্ন
সমীক্ষা দেখিয়েছে আইকিউ বংশগতির নির্ভুল মনে হলে বয়স এবং সামাজিক স্তরের ওপর তা নির্ভর করে থাকে। ফ্লুইড
ইন্টেলিজেন্স জানতে ব্যবহার করা হয় বিভিন্ন
আকার দেখে চেনা বা তিল খোঁজা ম্যাট্রিক্সের সমাধান করা আর শ্রেণীবিভাগ। বিজ্ঞানীরা
তাদের এই ধারণার কথা জানিয়েছেন প্রসিডিংস অব ন্যাশনাল একাডেমী অব সায়েন্স প্রকাশিত পেপারে। মেন্টাল
এক্সারসাইজ যত বেশি করানো
যাবে ততই ফ্লুইড বুদ্ধিমত্তা বাড়বে। আইকিউ
অথবা মেমরি বাড়িয়ে দেওয়ার মতো
অনেক এক্সারসাইজ বা মস্তিষ্কচর্চার উপায় প্রচলিত আছে। মেমরি
বাড়ানো যায় বলে সুসান জেগির বলেছেন, এক হাজার আইটেম বা পৃথক জিনিস মনে রাখা মোটেই সম্ভব নয়। আবার
অন্য উপায় আছে যার সাহায্যে স্মরণশক্তি নয়, মস্তিষ্কের
অন্য ধারাগুলো উন্নত হতে পারে। বৃদ্ধ
বয়সে মস্তিষ্ক দুর্বল হয়ে পড়ে। কারণ
বয়সের সঙ্গে নতুন কিউ জন্মগতভাবেই
নির্ধারিত হয় এমন বলা যায় না। আইকিউ
আরও উন্নত অবস্থায় যেতে পারে। কিন্তু
তার জন্য প্রয়োজন নির্দিষ্ট ধরনের মেন্টাল ট্রেনিং।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন