বৃহস্পতিবার, ১ মার্চ, ২০১২

একজন ইভটিজারের আত্মকাহিনী..........


আর আমার বর্তমান অবস্থান?? কারাগার.....!

কারাগার-ই সম্ভবত ভাবনা-চিন্তা বিকাশের শ্রেষ্ঠ জায়গাআমার ভবিষ্যত যেহেতু অন্ধকার, বর্তমান কারাগার-- তাই গত ক'দিনে অতীত নিয়েই বেশী ভাবলামভেবে ভেবে কি পেলাম জানেন? বলছি শুনুন........................


বয়েজ স্কুলে পড়তাম বলেই হয়তোবা গার্লস স্কুলের প্রতি মোহটা একটু বেশীই ছিলোতাতে কি? আমি ভালোই ছিলামমাথা নিচু করে স্কুলে যেতাম--সেভাবেই ফিরতামভালো ছাত্র ছিলাম বলে বাবা স্কুলে থাকতেই মোবাইল কিনে দেন বিপত্তির শুরুটা সেখানেইআমার বেশীর ভাগ বন্ধুর মোবাইল ছিলো না ওরা কোথা থেকে বিভিন্ন "ছোট আপু"/ "বড় আপু"-র নাম্বার নিয়ে আসতো -আর আমার মোবাইল দিয়ে ওদের ডিস্টার্ব করতোএর মধ্যে কিছু নাম্বার ছিলো 'স্পেশাল'অর্থাৎ মুঠোফোনের অন্য প্রান্তের মেয়েটি সহজেই বন্ধুত্ব মেনে নিয়ে চুটিয়ে প্রেম করতো বন্ধুরা চলে যেত বটে........ কিন্তু মুঠোফোনের 'স্পেশাল' নাম্বার গুলো তো রয়েই যেতওদের মিসড্‌ কল, মেসেজ......কল ইত্যাদি রিসিভ করতে করতে হঠাৎ-ই আসক্ত হয়ে গেলামএবার আর বন্ধুদের দরকার নেইঅচেনা বিভিন্ন নাম্বারে ফোন করে নিজেই খুজে বের করতাম আরো 'স্পেশাল' নাম্বারঅনেকে ফোনে ঝাড়িও দিয়েছেতবে রয়ে যাওয়া 'স্পেশাল' নাম্বার গুলোর সুকন্ঠের মায়া আর ছাড়তেই পারিনি !

এভাবেই ছাড়িয়ে গেলাম অধঃপতনের প্রথম স্তর....................

বলাই বাহুল্য এস,এস,সি তে বাজে রেজাল্ট এবং বেসরকারী কলেজে ভর্তিএখানে আবার কো-এডুকেশন দু'একটা মেয়েই শুধু বোরকা পড়ে আসতোআর বাকীরা 'হেডলাইট' জ্বালিয়ে ঘুরে বেড়াতক্লাশে শুধু ছেলে মেয়েদের মিস্টি-দুস্টু ঝগড়া আর বলিউডি ফ্যাশন নিয়ে আলোচনাঅবস্থা এমন যে-- 9XM কিংবা Mtv --র গান বাজনা না দেখলে ক্লাশে টেকাই দায়বাধ্য হয়েই দেখা শুরু করলামঢুকলাম প্রাইভেট কোচিং-এসেখানে সব সুন্দরীদের আনাগোনাবাহারী চুলের ডিজাইন, টাইট জিন্স, টি-শার্ট পড়া আধুনিকারা এতো কাছে বসতো যে তার গায়ে মাখা সুগন্ধী কোন ব্র্যান্ডের তা নিয়ে বন্ধুরা রীতিমত তর্ক জুড়ে দিতাম! 'আধুনিকা'-দের কাছে 'আধুনিক'-রাই দাম পায়তাই চুলে ওয়েস্টার্ন ছাট দিলামপ্যান্ট ছেড়ে জিন্স আর হাতে-গলায় মাদুলীচোখে রোদ চশমা--শীত গ্রীষ্মে তখন আমার নিত্য সঙ্গী

এভাবেই ছাড়িয়ে গেলাম অধঃপতনের মধ্য স্তর....................


কোচিং সেন্টারে আসা ভিন্ন কলেজের মেয়েদের পিছনে ঘোরা শুরু হলোতাদের দৃষ্টি আকর্ষণে মরিয়া হয়ে ওদের কলেজ গেটে দাড়াতামকাউকে কাউকে ফলো করে বাসা পর্যন্ত চলে যেতামসালমান খান স্টাইলে শিষ্‌ দিলে কারিনা স্টাইলের মেয়েটি যখন অদ্ভুত নয়নে তাকাতো......... ভিতরে গভীর আনন্দ পেতাম

এভাবে আসক্তিটা 'দেখা' থেকে 'ছোয়া'-য় পরিণত হলোরমনার ভীড়ে কিংবা বইমেলার লাইনে অথবা টি,এস,সি-তে অযাচিত ধাক্কায় ছোয়া-র বিমল সুখ নেওয়া শুরু হলো

এভাবেই পৌছে গেলাম অধঃপতনের শেষ স্তরে....................


এরপর 'হারানো' আমি-- নম্র কিংবা উগ্র, লাজুক কিংবা আধুনিকা যে কাউকে নোংরা চোখে বলৎকার করতামকখনো হাত ধরে টেনে , কিংবা ওড়না টেনে ফেলে দিয়ে অনাবিল সুখে বন্ধুরা হাসাহাসি করতামনোংরামি ভালো-ই চলছিলোহঠাৎ-ই ধরা পড়ে গেলাম।........

বলতে লজ্জ্বা হচ্ছে যে, আমি একজন ইভটিজারতবুও জোর গলায় বলছি ভাই-- আমি ইভটিজার হতে চাইনি ......... আমার পরিবেশ আমাকে ইভটিজার বানিয়েছে

সূত্র: ইন্টরনেট ।


জানলে তো… একজন ইভটিজারের আত্মকাহিনী.......... আসুন সকলেই আমরা ইভটিজিং থেকে বিরত থাকি। নিজেও না করি এবং অন্যকেউ না করাতে সহযোগিতা করি। সর্বদা ধৈর্য ধরুন, মনে দৃঢ়তা বজায় রাখুন। একদিন দেখবেন, আপনি নয়! শহরের সবচেয়ে সুন্দরী মেয়েটি আপনার পিছু পিছু ঘুড়ছে। সকলেই ভাল থাকবেন, কেমন?


কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন